যখন আমরা নিজেদের সমস্যার দায় অন্যদের উপর চাপিয়ে দিই, তখন মূল সমস্যাটা থেকেই যায়। প্রতিটা সম্প্রদায়ের মধ্যে খারাপ মানসিকতার মানুষের অভাব নেই, কিন্তু বিভিন্ন ধরনের লোভে পড়ে সন্ত্রাস বাদে জড়িয়ে পড়ার হার মুসলিমদের মধ্যে বেশি সেটা অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই…
কিন্তু এই যে বাতাসে হাওয়া উঠলেই রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার শিকার হয়ে ওই সম্প্রদায়ের সকলকে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সুপ্ত ঘৃণার লাভাস্রোত বেরিয়ে আসা , এই যে কোনো অপরাধ না করেও স্রেফ ধর্ম পরিচয়ের জন্য সামাজিক হেনস্থা.. এগুলো কিন্তু কাম্য নয়
আমরা জানি আমাদের সাথে এঁরকম যারা করেন তারা সমাজের শিক্ষিত, Privileged লোকজন, কিন্তু তারা কি একটা মুসলিম যে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে আসতে চায় তাদের struggle এর মূল্য বোঝেন…? না বোঝেন না
আজ যখন হিন্দু সমাজ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, সেটা শুধু রাজনৈতিক চেতনার কারণে নয়, এটা প্রতিক্রিয়া, দীর্ঘ কালীন ইসলামের নামে অপব্যবহার বা জঙ্গিপনা যাই বলুন না কেন ।
আর এই প্রতিক্রিয়ার শেষ শিকার হবো আমরাই – ভারতের মুসলমানরা। কঠোর আইন, ইউনিফর্ম সিভিল কোড- সবই আসতে পারে, যদি আমরা এখনই আত্মসমালোচনা না করি।
কিন্তু কোরআন কী বলে ?
বক্তব্য এক
یَـٰۤأَیُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقۡنَـٰكُم مِّن ذَكَرࣲ وَأُنثَىٰ وَجَعَلۡنَـٰكُمۡ شُعُوبࣰا وَقَبَاۤىِٕلَ لِتَعَارَفُوۤا۟ۚ إِنَّ أَكۡرَمَكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ أَتۡقَىٰكُمۡۚ
হে মানুষ! আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, আর তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অন্যের সাথে পরিচিত হতে পার । তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে ব্যক্তিই বেশী মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে বেশী তাকওয়াসম্পন্ন ( আল্লাহ ভীরু) । ( সূরা হুজুরাত ৪৯:১৩ )
বক্তব্য দুই
لَاۤ إِكۡرَاهَ فِی ٱلدِّینِۖ
দীন (ইসলাম) গ্রহণের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই
( সূরা বাকারা ২:২৫৬)
বক্তব্য তিন
مَن قَتَلَ نَفۡسَۢا بِغَیۡرِ نَفۡسٍ أَوۡ فَسَادࣲ فِی ٱلۡأَرۡضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ ٱلنَّاسَ جَمِیعࣰا وَمَنۡ أَحۡیَاهَا فَكَأَنَّمَاۤ أَحۡیَا ٱلنَّاسَ جَمِیعࣰاۚ
নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করার দন্ডদান উদ্দেশ্য ছাড়া কাউকে হত্যা করল, সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষকেই হত্যা করল। আর কেউ কারো প্রাণরক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল। ( সূরা মায়িদা :32 )
বক্তব্য চার
وَلَوۡ شَآءَ اللّٰہُ لَجَعَلَکُمۡ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً وَّلٰکِنۡ لِّیَبۡلُوَکُمۡ فِیۡ مَاۤ اٰتٰىکُمۡ فَاسۡتَبِقُوا الۡخَیۡرٰتِ
আর আল্লাহ ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে এক উম্মত করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা দিয়ে তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান। কাজেই সৎকাজে তোমরা প্রতিযোগিতা কর। ( সূরা মায়িদা ৫:৪৮)
তাই সারমর্ম এটাই যে একজন মুসলিম হিসেবে তাই এটা গ্রহণ করতেই হবে যে বৈচিত্র্য আল্লাহরই সৃষ্টি। ইসলাম তখনই প্রসার লাভ করেছিল আরব উপ দ্বীপের বাইরে , যখন তা ভৌগোলিক সংস্কৃতিকে গ্রহণ করেছিল- তাকে মুছে নয়, মানুষের কণ্ঠকে রুদ্ধ করে নয় , বরং তার অনুভূতিকে শক্তি দিয়েছিল, অবহেলিত নিপীড়িত মানুষকে দিয়েছিল সমান অধিকার ।
আজ দরকার স্লোগানের চেয়ে বেশি বেশি আত্মবিশ্লেষণ। দরকার চিন্তার মুক্তি, গবেষণা ও সৃষ্টিশীলতার পুনরুজ্জীবন, জ্ঞানের চর্চা । নিজেদের আয়নায় নিজেকে দেখা
পৃথিবীতে মানব হত্যা কোনো সুস্থ মানুষের লক্ষ্য হতে পারে না। আমাদের সুশিক্ষা গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে হবে.. ডাক্তার, মাস্টার, আইনজীবী, ইঞ্জিনিয়ার সব রকমের পেশায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা অর্জন করতে হবে, এটা শুধু যোগ্যতা নিয়ে লড়াই নয় মুসলিম নামের বোঝা নিয়ে অস্তিত্বের সংগ্রাম, অস্তিত্বের সংগ্রাম এমন একটা দেশে যার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বারবার অস্বীকার করতে চায় আমাদের সংগ্রামকে, বেঁচে থাকার লড়াইকে, ভালো মানুষ হবার লড়াইকে, কিন্তু আমাদের শপথ নিতে হবে আমরা ভালো মানুষ হবই, আমরা ধর্মকে মানবো কিন্তু বিলিয়ে দেবো দেশের জন্যে প্রাণ, জ্ঞান ও সামর্থ্য…..




